ফেসবুক নিয়ে সংসারে বিরোধ?




পারিবারিক আদালতে একজন স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেনতিনি আদালতে তালাকের ডিক্রি চেয়েছেন এ কারণে যে, তাঁর স্বামী ফেসবুকে অন্য নারীদের সঙ্গে চ্যাট করেন এবং অন্য নারীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছেআদালতের সমন পেয়ে তাঁর স্বামী লিখিত জবাবে উল্লেখ করেন, তাঁর স্ত্রী অযথাই তাঁকে সন্দেহ করছেনতিনি দাবি করেন, ফেসবুকে তাঁর কয়েকজন বান্ধবী রয়েছেন বটে, কিন্তু তাঁরা ফেসবুক বন্ধু ছাড়া আর কেউ ননতাই তিনি এই বিচ্ছেদ চান নাআদালতে মামলা মামলার গতিতে চলতে লাগলনিয়ম অনুযায়ী পারিবারিক আদালতে বিচার শুরু হওয়ার আগে বিচারকের দুই পক্ষকে নিয়ে তাঁর খাসকামরায় আপস-মীমাংসা করার রীতি রয়েছেআদালতে এই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এলেনবিচারক তাঁদের সঙ্গে কথা বললেনকার কী অভিযোগ শুনলেনস্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামীর চরিত্র ফেসবুকের কারণে নষ্ট হয়ে গেছেএখন আর এই স্বামীর ঘর করবেন নাস্বামী তো এ কথা মানতে নারাজঅবশেষে অনেক আলাপ-আলোচনার পর স্বামী প্রস্তাব দিলেন কী করলে এই বিচ্ছেদের আবেদন তাঁর স্ত্রী প্রত্যাহার করবেনস্ত্রী দাবি করলেন, ফেসবুকের পাসওয়ার্ড তাঁকে দিতে হবেস্বামী রাজি হলেনবিচারক তাঁদের তিন দিন সময় দিলেন এবং তিন দিন পর তাঁদের মতামত জানাতে বললেনতাঁরা দুজনেই তিন দিন পর আদালতে এলেন এবং বললেন যে ফেসবুক নিয়ে তাঁদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিলস্ত্রী তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন প্রত্যাহার করতে চানআদালত প্রত্যাহারের অনুমতি দিলেন
আরেক দম্পতির প্রায় চার বছর হলো বিয়েরদুজনেই উচ্চবিত্ত পরিবারেরতাঁদের এক বছরের একটি মেয়েও হয়েছে এর মধ্যেবিয়ের শুরু থেকেই বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকেকিন্তু ঝগড়া পর্যন্ত বিষয়টি আর সীমাবদ্ধ থাকে নাকিছু হলেই ফেসবুকে একজন আরেকজনকে নিয়ে বাজে মন্তব্য পোস্ট করে থাকেনবিশেষ করে স্বামী কিছু হলেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অশালীন মন্তব্য পোস্ট করেনআবার ঝগড়াঝাঁটি মিটে গেলে এই পোস্ট কখনো কখনো মুছেও দেনসম্প্রতি আবার তাঁদের মধ্যে বড় ধরনের ঝগড়া হয় এবং স্ত্রী ও তাঁর মাকে নিয়ে মানহানিকর ও অশালীন মন্তব্য পোস্ট করেন দেন স্বামীসঙ্গে কিছু অশ্লীল ছবিওএ নিয়ে স্ত্রী ততটা মুখ না খুললেও তাঁর মা ছেলেটির বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা ঠুকে দেন থানায়এবার এ নিয়ে ছেলেটি পড়ে গেল পুলিশি ঝামেলায়তাঁর স্ত্রীও বেঁকে বসলেনএদিকে ছেলেটি গ্রেপ্তার হলেনপরিশেষে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেন
এ কথা বলার আর খুব বেশি প্রয়োজন নেই যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফেসবুক কীভাবে জড়িয়ে গেছেকিন্তু এই ফেসবুক যখন দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নিয়ে আসে এবং এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়া হয়, তখন ফেসবুক যেন একটি অভিশাপ হয়ে ওঠেফেসবুকের কারণেই হোক আর যেকোনো কারণেই হোক, আইনের চোখে অপরাধ অপরাধইআর সংসারে আইনি ঝামেলা ঢুকে গেলে এ থেকে নিস্তার পাওয়া অতটা সহজ নয়
কী করণীয়
ফেসবুক নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব বা বিরোধ হলে প্রথমেই আইনের আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা না করে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা উচিতসামান্য কোনো সন্দেহ বা ঝগড়া নিয়ে কিছু পোস্ট করা হলেও আইনের চোখে অপরাধ হলে এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা করার অধিকার অপরজনের রয়েছেতাই সংসারের ঝগড়া ফেসবুকে না এনে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে সুষ্ঠুভাবে সমাধানের দিকে যাওয়া উচিতঅনেক সময় দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলেও আগের স্বামী বা স্ত্রী ছবি পোস্ট করেন এবং অন্যজনকে বিরক্ত করার ঘটনা ঘটেএটা কিন্তু মারাত্মক অপরাধআবার ইনবক্সে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানএগুলো সইবার অপরাধের শামিল এবং এই অপরাধের শাস্তি সর্বনিম্ন সাত বছর এবং এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

৬৫ রানেই গুটিয়ে গেল নামিবিয়া




অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ৬৫ রানেই অলআউট হয়েছে নামিবিয়া

মঙ্গলবার কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলনেতা মেহেদী হাসান মিরাজ

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৩২ দশমিক ৫ ওভারে মাত্র ৬৫ রানে অলআউট হয় নামিবিয়ানামিবিয়ার পক্ষে ডেভিন ১৯ এবং লরেন্স ১৭ রান করেনএছাড়া আর কেউ দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি

বাংলাদেশের পক্ষে আরিফ, মিরাজ এবং শাওন প্রত্যেকেই ২টি করে উইকেট লাভ করেনএছাড়া, সাইদ ও সাইফুদ্দিন ১টি করে উইকেট লাভ করেন

ইতিমধ্যে টানা দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ যুবারা কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছেশেষ আট নিশ্চিত করেছে প্রতিপক্ষ নামিবিয়াওপ্রথম দুই ম্যাচে রান রেটে বাংলাদেশের চেয়েও এগিয়ে তারাফলে এই ম্যাচ গ্রুপ সেরা হওয়ার সাথে মর্যাদার লড়াইও বাংলাদেশের জন্য

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ৪৩ রানে হারায়দ্বিতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৪ রানের জয় পায় বাংলাদেশ

বদলে যেতে পারে মার্কিন রাজনীতি




আজ ১ ফেব্রুয়ারি, আইওয়া অঙ্গরাজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থকেরা যাঁর যাঁর দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর প্রাথমিক নির্বাচন সম্পন্ন করবেনঅধিকাংশ দেশে দলের কর্তাব্যক্তিরাই ঠিক করেন, কে সে দলের পক্ষে নির্বাচনে পদপ্রার্থী হবেনআমেরিকায় সে অধিকার দলের তালিকাভুক্ত সদস্যদেরককাসপ্রাইমারিনামে পরিচিত প্রাক্-নির্বাচনী ভোটের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের ডেলিগেটবাছাই সম্পন্ন করবেনএ বছর জুলাই মাসে দুই দলের ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় সম্মেলনে এই ডেলিগেটদের ভোটেই দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবেদেশের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই এই প্রাক্-নির্বাচনী ভোট হবে, আইওয়া দিয়ে সে প্রক্রিয়া শুরু, সে কারণে আইওয়া ককাসেরএত গুরুত্ব
মোট ডেলিগেটের মাত্র ১ শতাংশ আইওয়া ককাসে নির্ধারিত হবেরিপাবলিকানদের ৩০ ও ডেমোক্র্যাটদের ২৯ জনতা সত্ত্বেও সবার চোখ এখন আইওয়ার দিকেএবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যাঁরা জনমত গণনায় এগিয়ে আছেন, তাঁরা কেউই দলের কর্তাব্যক্তিদের পছন্দের নয়রিপাবলিকানদের মধ্যে বিলিয়নিয়ার ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প সব হিসাব উল্টে দিয়ে এক নম্বরে রয়েছেনদলের নেতাদের বিশ্বাস, এই লোক যদি শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন পান, তাহলে নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভরাডুবি ঠেকানো অসম্ভব হবেট্রাম্প শুধু যে হিস্পানিক ও মুসলিম অভিবাসীদের খেপিয়ে তুলেছেন তা-ই নয়, দলের সব প্রচলিত নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেনব্যাপারটা রিপাবলিকানদের জন্য এতটাই উদ্বেগজনক যে এ দেশের অন্যতম প্রধান রক্ষণশীল পত্রিকা, ন্যাশনাল রিভিউতে দেশের ২১ জন নামজাদা বুদ্ধিজীবী একযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধেএই শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে যেভাবে হোক এই ভুঁইফোড় রাজনীতিককে ঠেকানোর আবেদন করেছেন
জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পকে যিনি ছুঁইছুঁই করছেন, টেক্সাস থেকে নির্বাচিত সিনেটর টেড ক্রুজ, নিজের দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর নাটকীয় ভূমিকার জন্য খ্যাতি অথবা কুখ্যাতি অর্জন করেছেনমূলধারার সম্পূর্ণ বাইরের এই রাজনীতিক আশা করছেন, অতি রক্ষণশীল ও কট্টর খ্রিষ্টান ইভানজেলিক্যালদের ভোটে তরি তীরে ভেড়াতে সক্ষম হবেনসবাই একমত, ট্রাম্পের মতো ক্রুজও দেশের সংখ্যালঘু ও মধ্যপন্থীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হবেন
রিপাবলিকান নেতারা আশা করেছিলেন, হয় ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ অথবা একই অঙ্গরাজ্যের তরুণ সিনেটর কিউবান বংশোদ্ভূত মার্কো রুবিও মনোনয়ন ছিনিয়ে নেবেনতাঁরা দুজনেই যাঁর যাঁর নির্বাচনী তহবিলে মোটা অঙ্কের চাঁদা পেয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষে নামজাদা রাজনীতিকেরা সমর্থন জানিয়েছেনকিন্তু ট্রাম্পের অতিনাটকীয়তা ও ক্রুজের অতিতপ্ত প্রচারণার মুখে তাঁরা দুজনেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন
ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে অবস্থা একই রকম জটিল ও অবাস্তবতিন মাস আগেও সবাই নিশ্চিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বিপুল জনসমর্থনে ধন্য হয়ে নিজ দলের মনোনয়ন হেলায় ছিনিয়ে নেবেনকিন্তু বাস্তবে সে কথা সত্য প্রমাণিত হয়নিসারা দেশে হিলারির সমর্থন ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বে ওঠেনি
হিলারিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সপ্রায় ৭৫ বছর বয়স্ক এই রাজনীতিক নিজেকে কোনো রাখঢাক ছাড়াই গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিকহিসেবে পরিচয় করাতে ভালোবাসেনতাঁর সমর্থনের একটি পরিমাপক হলো, এ পর্যন্ত তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছায় চাঁদা দিয়েছেন, তাঁদের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছেএই সংখ্যা চার বছর আগে ওবামা যে সংখ্যায় চাঁদা পেয়েছিলেন, তার চেয়ে ১০ লাখেরও বেশিগড়ে মাত্র ২৭ ডলার চাঁদা পেয়ে গত বছরের শেষে তাঁর প্রাপ্ত মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার
মজার ব্যাপার হলো, ট্রাম্প ও স্যান্ডার্সকে যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁদের মধ্যে আশ্চর্য মিল রয়েছেট্রাম্পের বেলায় তাঁর সমর্থকদের অধিকাংশই শ্বেতকায়, মাঝবয়সী ও স্বল্পশিক্ষিতঅব্যাহত অভিবাসনের কারণে ও মন্দাবস্থার দরুন এঁরা নিজের সরকার ও দলের রাজনীতিকদের ওপর খেপে আছেনআমেরিকান ড্রিমতাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে, এ জন্য তাঁরা ওয়াশিংটনের রাজনীতিকদের দায়ী করছেনআরও লক্ষণীয়, কৃষ্ণকায় ওবামাকে তাঁরা সাত বছর পরও প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি
অন্যদিকে, চার বছর আগে যে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিটআন্দোলন শুরু হয়েছিল, যার প্রভাবে ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন, বার্নি স্যান্ডার্স সেই সমর্থন-ভিতকে নিজের পক্ষে টানতে পেরেছেনতাঁর কারণেই হিলারি ক্লিনটনকে অবস্থান বদলে বামমুখী হতে হয়েছেযেমন, তিনি বরাবর আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে ওকালতি করেছেন, কিন্তু অতি সম্প্রতি সুর বদলে স্যান্ডার্সের দেখাদেখি সে চুক্তির বিরোধিতার কথা ঘোষণা করেছেন
এ কথার অর্থ অবশ্য এই নয়, বার্নি স্যান্ডার্স বা ডোনাল্ড ট্রাম্পই যাঁর যাঁর দলের মনোনয়ন লাভ করবেনজনসমর্থনে জাতীয়ভাবে স্যান্ডার্সের তুলনায় হিলারি প্রায় ২০ শতাংশ এগিয়ে আছেনকিন্তু আইওয়া এবং ঠিক তারপরেই নিউ হ্যাম্পশায়ারে তিনি যদি পর্যুদস্ত হন, তাঁর নির্বাচনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে২০০৮ সালে অনিবার্য বিজয়ের মুখ থেকে তিনি ওবামার কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিলেনতবে স্যান্ডার্সের সমর্থন-চক্র অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র হওয়ায় ও সংখ্যালঘুদের নিজেদের পক্ষে টানতে অসমর্থ হওয়ায় চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনা কমতবে এ অবস্থা যে বদলাবে না, এ কথা বলা বোকামি